সম্পর্কোন্নয়নে বিএনপিকে কড়া বার্তা দিলো ভারত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছিল বিএনপি। এর আগে বিএনপির প্রতিনিধিরা ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির উচ্চ পর্যায়ে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অতীতে দলটির ভারতবিরোধী ভূমিকা বর্তমানে নেই বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না ভারত।
মূলত জামায়াতকে সঙ্গী করা ও ভারতবিরোধী ভূমিকার কারণে দেশটি আস্থা নেই বিএনপির ওপের। গত নির্বাচনের পর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিজেপির উচ্চ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে বিএনপিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে বিজেপির পলিসি রিসার্চ সেলের সিনিয়র সদস্য অনির্বাণ ড: গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কই আসলে এই সমস্যার মূলে। কথাটা হল বিএনপি তাদের ভারতবিরোধী অবস্থান বদলাবে কি বদলাবে না, সেটা কিন্তু গৌণ।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান ব্যাপারটা হল জামাতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তারা আগে পরিষ্কার করুক। ওটা নিয়ে তারা লুকোচুরি খেলেই যাচ্ছে! বাকি সবই অন্য কথা। বিএনপি কী ভাবল না ভাবল তাতে ভারতের বিশেষ কিছু যায় আসে না।’
ড: গাঙ্গুলি বলছেন, ‘যে রাজাকারদের বিএনপি আজীবন তোষামোদ করে এসেছে তাদের প্রতি অবস্থান পরিষ্কার না করলে ভারতেরও যে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়, এটা তো বুঝতে হবে ‘
বিএনপি নেতারা প্রায়ই ভারতের নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বাংলাদেশে তাদের সব ডিম একটাই ঝুড়িতে (অর্থাৎ আওয়ামী লীগ) রাখাটা কোনও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তার জবাবে অনির্বাণ গাঙ্গুলি কটাক্ষ করে এমন কথাও বলছেন, ‘যারা নিজেদের সব ডিম জামাতের ঝুড়িতে রেখে বসে আছে, তাদের মুখে অন্তত এ ধরনের কথা মানায় না!’
আর ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে বলেছে, ‘ভারতের ভেতর বিএনপির হয়ে যারা লবিইং করতে পারেন বলে বিএনপির ধারণা, তাদের সঙ্গে এসে দলের নেতারা দেখাও করছেন। কিন্তু সমস্যা হল, মানুষ তো মুখের কথায় নয় – বরং পুরনো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই চলে। আমরা কী করে ভুলি খালেদা জিয়ার আমলে দু’দেশের সম্পর্ক একেবারে থমকে গিয়েছিল?’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বদ্ধমূল ধারণা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিএনপি আমলে যে দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার করার চেষ্টা হয়েছিল তাতে আইএসআই তথা পাকিস্তান সরকারে প্রত্যক্ষ যোগসাজস ছিল।’
ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসেকাজ করা নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জির বলছেন, ‘প্রথম সমস্যা হল বিএনপির পাকিস্তানপন্থী ভূমিকা। ভারতের চেয়ে তারা যে পাকিস্তানের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ, সেটা তো সহজেই বোঝা যায়। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার আমলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে আসামের আলফা কিংবা মণিপুর-নাগাল্যান্ডের জঙ্গীরাও বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে বলে ভারতের কাছে প্রমাণ আছে, আর সেটাও ছিল আমাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা।